সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ্র জন্য। দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর।
✦ তাওহীদের বাণী ও তার ফজিলত
“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” — এই মহান কালিমা কেবল মুখে উচ্চারণ করলেই যথেষ্ট নয়; বরং এর সঠিক অর্থ জানা এবং সেই মোতাবেক আমল করাই প্রকৃত তাওহীদের দাবি। ইসলামি শরিয়তের মতে, যে ব্যক্তি এই বাণীর অর্থ জানবে, বিশ্বাস করবে এবং নিজের কর্মে তা বাস্তবায়ন করবে— সে জান্নাতের অধিকারী হবে এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে।
শাইখ সুলাইমান বিন আব্দুল্লাহ্ (রহঃ) বলেছেন:
“যদি কেউ অন্তর থেকে এই কালিমার স্বীকৃতি দেয়, এর অর্থ বোঝে এবং বাস্তবায়নের চেষ্টা করে, তবে এটাই তার জন্য যথেষ্ট।”
✦ প্রমাণস্বরূপ হাদীস
উবাদা বিন ছামেত (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো শরীক নেই, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল; ঈসা আল্লাহর বান্দা, তাঁর রাসূল এবং তাঁর বাণী, যা মারিয়ামের প্রতি প্রেরিত হয়েছে; জান্নাত ও জাহান্নাম সত্য— আল্লাহ্ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যদিও তার আমল যা-ই হোক।”
[সহীহ মুসলিম]
✦ কালিমার সঠিক উচ্চারণ ও আমলের গুরুত্ব
আল্লাহ্ বলেন:
“অতএব জেনে নিন, আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব উপাস্য নেই।”
[সূরা মুহাম্মাদ, ১৯]
“তবে যারা জেনে সত্য সাক্ষ্য দেয়, তারাই (সত্যিকার ঈমানদার)।”
[সূরা যুখরুফ, ৮৬]
অতএব, মুখে কালিমা বলা যথেষ্ট নয়, বরং তা অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করতে হবে এবং জীবনেও প্রয়োগ করতে হবে।
✦ শর্তসমূহ সম্পর্কে ইমামদের ব্যাখ্যা
◉ শাইখ হাফেয আল-হাকামী (রহঃ) বলেন:
“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ বলা ততক্ষণ উপকারী হবে না, যতক্ষণ না একজন মুসলিম এর সাতটি শর্ত পূরণ করে। তবে শর্তগুলো মুখস্ত করা ফরয নয়; বরং জীবনে বাস্তবায়ন করাটাই মূল উদ্দেশ্য।”
◉ শাইখ আব্দুল আযিয বিন বায (রহঃ) বলেন:
“যদি কোনো ব্যক্তি এই কালিমার প্রতি বিশ্বাস রাখে, তার অন্তরে এর প্রভাব থাকে এবং সে আমল করে, তবে সে মুসলিম হিসেবে গণ্য হবে, যদিও সে শর্তগুলো বিশদভাবে না-ও জানে। তবে উম্মাহর মধ্যে এমন আলেম থাকা আবশ্যক, যারা এগুলো জানেন এবং অন্যদের শিক্ষা দেন।”
✦ শর্তগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ (সাতটি মৌলিক শর্ত):
১. ইলম (জ্ঞান) – কালিমার প্রকৃত অর্থ সম্পর্কে জানা।
২. ইয়াকিন (নিশ্চয়তা) – কোন সন্দেহ ছাড়া এক আল্লাহর উপাসনায় বিশ্বাস।
৩. ইখলাস (নির্ভেজাল একনিষ্ঠতা) – একমাত্র আল্লাহর জন্য এই কালিমা বলা।
৪. সিদক (সত্যতা) – মুখ ও অন্তরের মধ্যে মিল রেখে বিশ্বাস করা।
৫. মাহাব্বাহ (ভালোবাসা) – এই কালিমার প্রতি হৃদয়ে ভালোবাসা পোষণ করা।
৬. ইনকিয়াদ (অনুগত্য) – আল্লাহর আদেশ মান্য করা।
৭. কবুল (গ্রহণযোগ্যতা) – নিরঙ্কুশভাবে এই কালিমা মেনে নেয়া।
✦ ইলম ও আমলের ভারসাম্য
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন:
“সামগ্রিকভাবে রাসূল (সা.) যা নিয়ে এসেছেন, তা বিশ্বাস করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয। আর তার বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন ফরযে কিফায়া।”
তিনি আরও বলেন, কোন বিষয় জানা ফরয কি না, তা নির্ভর করে ব্যক্তির অবস্থান, জ্ঞানার্জনের সামর্থ্য ও দীনী দায়িত্বের পরিমাণের ওপর। সাধারণ মানুষের উপর সকল জ্ঞান আবশ্যক নয়; বরং যতটুকু জানলে সে দ্বীনের উপর চলতে পারে, ততটুকুই তার জন্য যথেষ্ট।
✦ উপসংহার
এই কালিমা শুধুমাত্র মুখে বলা নয়, বরং এর অর্থ জানা, অন্তরে বিশ্বাস রাখা ও আমলের মাধ্যমে প্রমাণ করাই মূল।
কালিমার শর্তগুলো জানা সাধারণ মুসলিমের জন্য ফরয নয়, কিন্তু তা অনুযায়ী আমল করা সকলের জন্য অপরিহার্য।
শর্তগুলো জানা ফরযে কিফায়া— উম্মাহর মধ্যে কিছু সংখ্যক ব্যক্তি শর্তগুলো জানবে ও অন্যদের শেখাবে, এই দায়িত্ব পালন করা জরুরি।