কারবালার ইতিহাস:
এক আত্মত্যাগের অনন্য অধ্যায়, ইসলামের জন্য রক্তের
প্রতিজ্ঞা
🔶 ভূমিকা:
১০ই মুহাররম, ৬১ হিজরী। ইতিহাসের এক বেদনাময় দিন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ(ﷺ)–এর প্রিয় নাতি, জান্নাতের যুবকের সরদার হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) শহীদ হন ফোরাত নদীর তীরে, কারবালার প্রান্তরে। এটি শুধু একটি যুদ্ধ ছিল না—এটি ছিল হক ও বাতিলের মাঝে এক কঠিন মুখোমুখি দাঁড়ানোর ইতিহাস।
🔹 কারবালার প্রেক্ষাপট:
খলিফা মুয়াবিয়া–এর মৃত্যুর পর তার পুত্র ইয়াজিদ অবৈধভাবে খেলাফতের দাবি করে। ইয়াজিদ ছিল খোদাভীরু, ন্যায়পরায়ণ ও আদর্শ মুসলিম শাসকের পরিপন্থী। সে প্রকাশ্যে গুনাহ করত এবং শরিয়তের পরোয়া করত না। হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর বায়আত গ্রহণ করেননি, কারণ তিনি সত্য ও ন্যায়ের উপর অবিচল ছিলেন।
🔹 কারবালার ময়দানে:
ইমাম হোসাইন (রাঃ) পরিবার-পরিজন নিয়ে মক্কা থেকে কুফার উদ্দেশ্যে রওনা হন, কারণ কুফাবাসীরা তাঁকে আমির বানানোর আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু কুফাবাসী বিশ্বাসভঙ্গ করে। ইয়াজিদের সেনাপতি ওমর ইবনে সাদ এক বিশাল বাহিনী নিয়ে তাঁকে অবরুদ্ধ করে। পানি বন্ধ করে দেওয়া হয়, শিশু ও নারীদের সামনে।
অবশেষে, আশুরার দিনে, মাত্র ৭২ জন সঙ্গী নিয়ে ইমাম হোসাইন (রাঃ) সত্যের পতাকা হাতে যুদ্ধ করেন ৩০,০০০ সৈন্যের বাহিনীর বিপক্ষে। একে একে শহীদ হন তাঁর ভাই, ভ্রাতুষ্পুত্র, সন্তান, বন্ধু — এবং অবশেষে, ইমাম হোসাইন (রাঃ) নিজে শহীদ হন।
🔹 সুন্নি আকিদায় কারবালার শিক্ষা:
1. হক ও বাতিলের পার্থক্য স্পষ্ট করা – হযরত হোসাইন (রাঃ) ইয়াজিদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা নত করেননি।
2. আল্লাহর রাস্তায় কুরবানির শ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত – পরিবার ও সন্তানদের নিয়েও তিনি আল্লাহর পথে শহীদ হন।
3. সাবালকতা ও সহনশীলতা – যুদ্ধ নয়, তিনি শান্তি ও সত্যের আহ্বানে এসেছিলেন।
4. কান্না নয়, শিক্ষা নিন – সুন্নি মত অনুযায়ী, কারবালার ঘটনা থেকে অনুশোচনা নয়, শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।
🟢 উপসংহার:
কারবালা কেবল ইতিহাসের একটি ট্র্যাজেডি নয়—এটি হলো ঈমান, ত্যাগ ও সাহসিকতার এক অপার শিক্ষার ভাণ্ডার। ইমাম হোসাইন (রাঃ)-এর বলিদান প্রমাণ করে দেয়, সত্যের পথে চলতে হলে পৃথিবীর সব কিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকতে হয়।
🕊️ কারবালা আমাদের শিক্ষা দেয়—আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যদি জীবনও দিতে হয়, তবুও পেছনে ফেরা চলবে না।