আসহাবে সুফফা: প্রিয় নবীজি রাসূলে পাক (ﷺ)-এর ছায়াতলে জীবন কাটানো সাহাবিদের দল
আসহাবে সুফফা—ইসলামের ইতিহাসে অনন্য এক শ্রেণির সাহাবি। এরা ছিলেন সেইসব দরিদ্র, নিঃস্ব, অথচ পরিপূর্ণভাবে দীনদার সাহাবি, যারা নিজেরা দয়াল নবীজি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)–এর সান্নিধ্যে থেকে কুরআন, হাদিস, তাকওয়া ও ইলম অর্জনে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাদের জন্য মসজিদে নববীর এক পাশে “সুফফা” নামে একটি ছায়াঘেরা জায়গা নির্ধারিত ছিল।
∆ সুফফার আশ্রয়: দুনিয়ার মোহহীন, আখিরাতমুখী জীবন
কিবলা পরিবর্তনের পর মসজিদের পূর্ব দিকে (যা পূর্বে কিবলা ছিল) এক স্থান নির্ধারণ করা হয়। এখানেই অবস্থান করতেন তাঁরা, যাদের ঘরবাড়ি ছিল না, পরিবার ছিল না, কিছুই ছিল না—তবে ছিল আল্লাহর প্রতি পূর্ণ তাওয়াক্কুল ও প্রিয় নবীজি রাসূলে পাক (ﷺ) প্রতি সীমাহীন ভালোবাসা। এককথায় সেই মহা সম্মানিত সাহাদ্বায়ারা ছিলেন প্রিয় নবীজি রাসূলে পাক (ﷺ) মূখী।
∆ তাঁরা কীভাবে জীবন যাপন করতেন?
🔹 হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন:
“আমি এমন অনেক আসহাবে সুফফাকে দেখেছি, যাঁদের গায়ে পূর্ণ পোশাকও ছিল না। কারও লুঙ্গি হাঁটু পর্যন্ত, কারও গোড়ালি পর্যন্ত—সতর ঢাকার জন্য তা ধরে রাখতেন।” (সহিহ বুখারি)
🔹 হজরত ওয়াসিলা ইবনুল আসকা (রা.) বলেন:
“আমাদের কারও কাছে পূর্ণ একটি কাপড় ছিল না, শরীর ঘামে ভিজে থাকত, ধুলায় মলিন থাকতাম।”
🔹 আবু হুরায়রা (রা.) আরও বলেন:
“ক্ষুধার তীব্রতায় আমি বুক ও পেট মাটিতে লাগিয়ে রাখতাম বা পেটে পাথর বাঁধতাম যাতে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি।”
🥣 এক পেয়ালা দুধের ঘটনা
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন—
একবার প্রিয় নবীজি রাসূলে পাক (ﷺ) তাঁকে একটি দুধের পেয়ালা দিয়ে বললেন: “আসহাবে সুফফাকে ডেকে আনো।”
তিনি মনে মনে ভাবলেন, এ দুধ তো অল্প! সবাইকে দিলে আমার জন্য কিছু থাকবে না। কিন্তু আনুগত্যে দ্বিধা না করে সবাইকে ডেকে আনলেন। সবাই দুধ পান করলেন তৃপ্তি নিয়ে।
সব শেষে প্রিয় নবীজি রাসূলে পাক (ﷺ) বললেন: “এখন তুমি পান করো।”
তিনি পান করলেন, পেট ভরে গেল। তারপর দয়াল নবীজি রাসূলে পাক (ﷺ) পান করলেন। (সহিহ বুখারি)
∆ প্রিয় নবীজি রাসূলে পাক (ﷺ)ভালোবাসার নিদর্শন
আসহাবে সুফফার প্রতি দয়াল নবীজি রাসূলে পাক(ﷺ)–এর ভালোবাসা ছিল অতুলনীয়। সদকা এলে তিনি নিজে গ্রহণ করতেন না; পুরোটা তাঁদের জন্য পাঠিয়ে দিতেন। হাদিয়া এলে কিছু নিজে নিতেন, বাকিটা তাঁদের দিতেন।
আসহাবে সুফফার সাহাবিরা ছিলেন ইলম, ইবাদত, ধৈর্য ও তাওয়াক্কুলের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। দুনিয়াবিমুখ জীবন যাপন করেও তাঁরা ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন আলোর অক্ষরে। তাদের জীবন আমাদের শেখায়—সত্যিকার তাকওয়া, ভালোবাসা ও দীনের প্রতি নিষ্ঠা কেমন হওয়া উচিত।
চলমান…