ফিতনার পর্যায়ক্রম ও হাদীসের ব্যাখ্যা
📌 রেওয়ায়েতের একটি ব্যাখ্যা এভাবে করা হয়েছে—
প্রিয় নবীজি রাসূলে পাক (ﷺ)-এর ওফাতের পর থেকে দাজ্জাল আগমনের পূর্ব পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহর ওপর চারটি বড় ফিতনা সংঘটিত হবে।
- ১. প্রথমে নাশফ-এর ফিতনা,
- ২. এরপর রাযফ-এর তুলনায় অধিক কঠিন ফিতনা,
- ৩. তৃতীয় ধাপে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের মতো উথালপাতাল অন্ধকারাচ্ছন্ন ফিতনা,
- ৪. এবং সর্বশেষে দাজ্জাল-এর ফিতনা।
তবে কিছু রেওয়ায়েত থেকে ধারণা করা যায়— এই হাদীসে বর্ণিত চারটি ফিতনা মানে পুরো ইসলামী ইতিহাসের চারটি সময় নয়, বরং শেষ জামানার বিশেষ একটি সময়কে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেই সময়টি হলো: ফিতনায়ে দুহাইমা থেকে দাজ্জাল পর্যন্ত। প্রতিটি পর্যায়কে এক একটি ফিতনা বলা হয়েছে।
🕋 হুযাইফা রা. থেকে একটি মূল্যবান হাদীস—
أتتكم الدهيماء ترمي بالنشف ثم التي تليها ترمي بالرضف
—“তোমাদের (মুসলমানদের) উপর ফিতনায়ে দুহাইমা এসে পড়বে। তখন নাশফ (কালো পাথর) নিক্ষেপ করা হবে, আর এরপর রাযফ (অগ্নিশীলা) নিক্ষেপ করা হবে।”
📚 সূত্র: গারিবুল হাদিস, ইমাম আবু উবায়দ (২/২৩২)
📖 আবু হুরায়রা রা. সূত্রে আরও একটি বর্ণনা—
أتتكم الدهيماء، قالها ثلاثًا، ترمي بالنشف، والثانية: ترمي بالرضف، والثالثة: سوداء مظلمة إلى يوم القيامة، قتلاها قتلى جاهلية
—“তোমাদের ওপর ফিতনায়ে দুহাইমা আসবে (তিনি নবীজি (ﷺ) এটি তিনবার বললেন)। প্রথমবার নাশফ (কালো পাথর) নিক্ষেপ করা হবে। দ্বিতীয়বার রাযফ (অগ্নিশীলা) নিক্ষিপ্ত হবে। তৃতীয়বার ঘন কালো অন্ধকারাচ্ছন্ন ফিতনা শুরু হবে, যা কিয়ামত পর্যন্ত চলবে। সে সময়ের হতাহতরা জাহেলি যুগের নিহতদের মতোই হবে।”
📚 সূত্র: তাসহিফাতুল মুহাদ্দিসীন, পৃষ্ঠা ৩২৭; তারিখ ইবনে মুয়াইয়েন ১/৩৩৫
🔍 “নাশফ” এর অর্থ ও তাৎপর্য
نَّشْفُ (নাশফ) শব্দটি এসেছে কালো পাথর বোঝাতে, যা সাধারণত হাম্মামে শরীর পরিষ্কারে ব্যবহৃত হতো।
📚 তাজুল আরুস– ২৪/৪০৬, আল-ফায়েক– ১/৪২২
আমি একে ‘কালো পাথর’ হিসেবে অনুবাদ করেছি। আমার ব্যাখ্যামতে, মুসলিম উম্মাহর উপর নাশফ (কালো পাথর) নিক্ষেপ বলতে যুদ্ধের সময়ে ব্যবহৃত গুলিবর্ষণ বা বুলেট বৃষ্টি বোঝানো হয়ে থাকতে পারে। হতে পারে, ফিতনায়ে দুহাইমা-র প্রথম ধাপে এভাবেই নারী, পুরুষ ও শিশুদের ওপর অস্ত্রের ভয়াবহতা নেমে আসবে, যা তুলনামূলকভাবে ছোট ফিতনা হলেও তা হবে অত্যন্ত ভয়ংকর ও রক্তক্ষয়ী।
🔚 উপসংহার
আমার মতে, ফিতনার এই চারটি ধাপের সূচনা হবে ফিতনায়ে দুহাইমা থেকে এবং এর শেষ হবে দাজ্জাল-এর আবির্ভাবে। হাদীসসমূহে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, এই প্রতিটি ধাপ একটির চেয়ে আরেকটি অধিক ভয়াবহ এবং অন্ধকারময় হবে।
🔖 এই ব্যাখ্যা কিয়ামতের পূর্ববর্তী ঘটনাবলির প্রতি সচেতনতা সৃষ্টি এবং আত্মশুদ্ধি ও ঈমান রক্ষার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। মুসলিম উম্মাহ যেন এই ফিতনার সময় সঠিক বুঝ ও আমল নিয়ে আগাতে পারে—এ কামনায়।